বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাখিদের বন্ধু তিনি

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:১৪

প্রতিদিন ভোরের সূর্য ওঠার আগেই দল বেঁধে পাখিরা আসে তার কাছে। আর তিনিও পাখিদের খাবার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যেই পাখিদের বন্ধু হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বর ও রেলবাজারে প্রতিদিন ভোরে দেখা যায় এক অদ্ভূত দৃশ্য। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি জড়ো হয়েছে। আর তাদের খাবার দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। এই ব্যক্তিটি হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস।

প্রতিদিন ভোরের সূর্য ওঠার আগেই দল বেঁধে পাখিরা আসে তার কাছে। আর তিনিও পাখিদের খাবার দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যেই পাখিদের বন্ধু হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।

মাগুরা সদর উপজেলার চেঙ্গারডাঙ্গা গ্রামের প্রবিত বিশ্বাসের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি মেজো। পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন ২০১১ সালের ৩ জুলাই। প্রথম কর্মস্থল ছিল ঝিনাইদহ। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে সাতক্ষীরায় বদলি হন। চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক বিভাগে বদলি হন ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ।

চুয়াডাঙ্গার পাখিদের সঙ্গে তখন থেকেই তার বন্ধুত্ব। ভোর হলেই পাখিরা দল বেঁধে ছুটে আসে তার কাছে খাবার খেতে। এ সময় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ। পাখির প্রতি তার এই গভীর মমতা দেখে রীতিমতো অবাক হন পথচারীরা।

পাখিরা সাধারণত হোটেল-রেস্তোরাঁর উচ্ছিষ্ট খাবার খায়। করোনা মহামারির প্রথম দিকে যখন চুয়াডাঙ্গা শহরের হোটেল- রেস্তোঁরাগুলো বন্ধ ছিল তখন মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস প্রতিদিন দোকান থেকে খাবার কিনেছেন পাখিদের জন্য।

সকাল ও দুপুর দুই বেলা পাখিদের খেতে দিয়েছেন চাল, শস্যদানা, চানাচুর। মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস শুধু পাখিদের খাবার দিচ্ছেন তা নয়। তিনি এখন পাখিদের জন্য গাছে গাছে নীড়ও তৈরি করে দিচ্ছেন।

এই শীতের প্রথম থেকেই অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রমের কথা চিন্তা করে বাঁধতে শুরু করেন পাখির বাসা।

‘পুলিশের বিচরণ যেখানে, পাখিদের অভয়ারণ্য সেখানে’ এই স্লোগানে পাখিদের বাসা গড়ার উদ্যোগ নেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

জেলার পাঁচটি থানা, একটি ফাঁড়ি ও ৩০টি ক্যাম্প ও ৩৯ টি স্থাপনার গাছে গাছে পাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য পাঁচ হাজার মাটির কলস ও বাঁশ দিয়ে নীড় তৈরি করছেন তিনি। এসব নীড়ে বাস করতে পারবে ২০-২৫ হাজার পাখি।

পুলিশ লাইন, পুলিশ সুপারের বাস ভবন, পুলিশ পার্কসহ শহরের পাখিদের আনাগোনার স্থানে নিজ হাতে পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

ছেলেবেলা থেকেই পাখিদের প্রতি অসম্ভব টান মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের। তিনি বলেন, খুব ছোট থেকেই পশুপাখিদের প্রতি তার ভালোবাসা । তখন বাড়িতে পাখির ঘর তৈরি করে পাখি পুষেছিলেন। ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরায় চাকরি করা অবস্থায়ও বাড়িতে পাখি পুষেছেন।

তিনি জানান, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’, স্বামী বিবেকানন্দের এই কথাটি মাথায় রেখে পাখিদের অভয়াশ্রমের কথা মাথায় আসে তার। পাখিদের খাবার খাইয়ে আত্মতৃপ্তি পান তিনি। তবে এবার পাখিদের নিরাপদ বাসস্থান গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।

জেলার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এখন শুধু জনগণের বন্ধু নয়, প্রাণীদেরও। পাখিদের বন্ধু মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের মতো সকলেরই এই ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত।

জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার পরিবেশবিদ বখতিয়ার হামিদ বিপুল। তিনি ‘পাখির গ্রাম বেলগাছি’ নামে একটি সংগঠনের সভাপতি।

তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমান বিশ্বের জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস সত্যিই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর